অনেকেই হয়তো চোখ কপালে তুলবেন যদি দুম করে বলে ফেলি প্রাচীন বারাসাতে একটা উদ্ভিদ উদ্যান ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ছিল। ১৮৪০ খৃঃ প্যারীচরণ সকাল এলেন বারাসাতে। বর্তমান সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান হয়ে। এই স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ছিলেন বৃক্ষ-প্রেমিক। তিনি বারাসাতে একটি কৃষিবিদ্যালয় এবং উদ্যান স্থাপন করেন। সাথে যােগদেন ডাঃ নবীন কৃষ্ণ মিত্র। কৃষিক্ষেত্র ছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন বাগানে তারা দুষ্প্রাপ্য গাছপালা এনে যত্নে পুঁততেন। ছাত্রের মত গাছকেও যত্ন করতেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সব চাইতে পুরাতন চেরী গাছটি প্যারীচরণ সরকার পুতেছিলেন। মুক্ত প্রকৃতির স্বাদ দেবার মানলে প্রথমে বিদ্যালয় ভবন ঘিরে বড়সড় বাগান গড়ে তোলেন।
তখন বারাসাত সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন মনােরম উদ্যান নন্দনকানন নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান ছায়াবাণী সিনেমার পেছনে গড়ে উঠেছে নয়নকানন। উদ্যানই, তবে বৃক্ষের নয়স কংক্রিটের। তা মহাত্মা কালীকৃষ্ণের অগ্রজ নবীনকৃষ্ণ নন্দনকানন সম্প্রসারিত করতে থাকলেন। বাগানের চৌহদ্দী দাড়িয়েছিল শেঠপুকুর থেকে বর্তমান ভাটরাপল্লি। আর হৃদয়পুর থেকে পাইওনিয়ার কলােনি (বর্তমানের) ধরে বারাসাত জংশন স্টেশনের জলের ট্যাঙ্ক পৰ্য্যন্ত। দামীদামী কাঠের গাছ শাল, সেগুন, শিশু, মেহগনী, নানা ফুল, বহু প্রকার গুল্ম, অজস্র ধরণের পরগাছা, নানা সুস্বাদু ফলের গাছ সৃষ্টি হল সেই নন্দনকাননে। মাঝে মধ্যে পুকুর খােড়া হল। প্যারীচরণ সরকার ১৮৭৫-এ মৃত্যুর পূর্বে বহুবার এসেছেন। এসেছেন বিদ্যাসাগর আর অন্যান্যরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সুবিশাল নন্দনকানন তথা প্রাচীন বারাসতের উদ্ভিদ উদ্যানের কোন অস্তিত্বই নেই। এমনকি উদ্যানের দক্ষিনাংশে মিত্রবাড়ির সঠিক হদিশও নেই।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
লেখকঃ সৌরভ বারুই
বারাসাতের বাদু অঞ্চল সংলগ্ন অন্তর্গত মাকড়সা পুকুরটি বর্তমানে শীত কালের বন-ভোজনের মনোরম উপযুক্ত পরিবেশের জায়গা। প্রত্যেক বছর বহু মানুষের সমাগম মাকড়সা পুকুর অঞ্চলে আমোদ প্রমোদ করতে আসে। মাকড়সা পুকুর অঞ্চলের প্রাচীন লোকেদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, পুকুরটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরেও বেশি। পুকুরটি ৫২ বিঘা জমি নিয়ে অবস্থান করছে। সেকালে রহড়া-বারাসাতের প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় অতীতে “লাবন্যবতী”, “শুঁটি”, “বিদ্যাধরী” প্রভৃতি নদী গুলি যখন কালের প্রভাবে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে অবলুপ্তির মুখে পতিত হচ্ছে, তখন দেখা দেয় জল কষ্ট। এই জল কষ্ট দূর করার জন্য খোঁড়া হয় “মাকড়সা পুকুর” সহ আরও বেশ কিছু পুকুর। স্থানীয় প্রাচীন অধিবাসীদের কাছ থেকে একটা প্রচলিত শ্লোক শোনা যায়-“হালো, কালো, ডিমসা/ মধুমুরালি মাকড়সা/ ঠাকুর পুকুর বলে দেখে যা” –অর্থাৎ বোঝা যায় সেই সময় মাকড়সা পুকুর সহ “হালো”, “কালো”, ”ডিমসা”, “ঠাকুর পুকুর”, “মধুমুরালি” প্রভৃতি পুকুর খনন করা হয়।
ওই অঞ্চলের প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে “মাখন সাহা” নামের কোনো ব্যক্তি পুকুরটি-কে খনন করান। সে সময়ে স্থানীয় লোকেরা পুকুরটি-কে “মাখন সাহার” পুকুর নামেই ডাকত। পরবর্তী কালে এই “মাখন সাহা” নামটি অপভ্রংশ হয়ে “মাকড়সা” নামের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। বর্তমানে মাকড়সা পুকুরের তত্ত্ববধায়ক (Caretaker) হলেন আসুরা বিবি। তিনি বলেন, তার চাচা জহরুদ্দিন এবং তার স্বামী নেপাল মন্ডল খুব ছোটো বেলায় শৈলেন মিত্রের সাথে বিহার থেকে এখানে চলে আসেন। শৈলেন মিত্র মাখন সাহার কাছ থেকে পুকুরটি কিনে নেন এবং তার পর থেকেই তাঁরা এখানেই থাকতেন। তার পর পরবর্তী কালে শৈলেন মিত্র কলকাতার বেলেঘাটায় চলে যান। মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন। জমির দেখাশুনার জন্য ছিল জহরুদ্দিন ও নেপাল মন্ডল। তিনি তাদের খুব ভালোবাসাতেন। সেই সব বহুকাল আগের কথা। প্রায় ২৫ বছর আগে ১০১ বছর বয়সে মারা যান শৈলেন মিত্র। তার পর-পরি মারা গেছেন নেপাল মন্ডল। সম্প্রতি মাস ছয়েক আগে জহরুদ্দিন দেহ রেখেছেন। শৈলেন মিত্রের কন্যা পদ্মা খাস্তুগির এখন মহেশ পুরের নিবাসী।
মাকড়সা পুকুর খনন করার সময় পুকুরের মাটি উঁচু হয়ে দু ‘পাশের ঢিবিকে অনেক উঁচু করে রেখে ছিল। পরবর্তীকালে স্থানীয় ইট-ভাটা গোবিন্দ ভাটার জন্য মাটি এখান থেকেই সংগ্রহ করা হত। ফলে সেই সু-উচ্চ ঢিবির সিকি ভাগই আজ টিকে আছে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্তমান কাছারি ময়দানে (তখন সুবৃহৎ ময়দান ছিল) ঘােড়দৌড় চালু করেন। এটি চালু হয় স্যার জন শোয়ের আমলে। কলকাতা টার্ফ ক্লাবের শতবার্ষিকীর ইতিহাস থেকে যে সব তথ্য পেলাম তদৃষ্টে বলা যায় ১৭৯৩ খ্রিঃ ১২ই ডিসেম্বর বারাসাতের ঘােড়দৌড়ের জন্য তিনদিনের সূচী বিজ্ঞাপিত হয়েছিল। সেখানে ১৮০৯ খ্রিঃ আক্রাতেও ঘােড়দৌড়ের উল্লেখ আছে। বারাসাতে ঘােড়দৌড় চালু হয়েছিল ১৭৮৮ খ্রিঃ। ১৮৪৭ খ্রিঃ ঘােড়দৌড় ব্যবস্থা কোলকাতায় চলে যায়।
Source: বই: ইতিহাসের বারাসাত | লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ | প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ | সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ | # ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
বাসরুটের কথা বলতে প্রথমে সেকালের পথের কথা বলতে হয়। চাঁপাডালি থেকে হাসনাবাদ পথটির নাম ছিল কালীমুন্সি রােড। টাকির কালীমুন্সির বদান্যতায় প্রথমে ঐ পথটি তৈরি হয়। যশােহর রােড ছিল হাটাপথ। যশােহরের কালী বারিকের বদান্যতায় যশােহর রােড ভালভাবে তৈরি হয়। কৃষ্ণনগর রােড বারাসাতের বুক চিরে ডাকবাংলাের কাছে যশােহর রােডে মিশেছে। প্রাচীন পথটি তৈরি করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। ক্যলাণী কংগ্রেসের সময় বিধানচন্দ্র রায় বর্তমান রূপ দেন। ব্যারাকপুর রােড হেলাবটতলা থেকে মণিরামপুর নিমাইঘাট পর্যন্ত। ১৬৬০-৭০ খ্রিঃ নীলকররা এই পথ করেছিলেন। আন্তঃ বারাসাতের দুটি প্রাচীন পথের নাম ক্ষেত্ৰনাথ চট্টোপরাধ্যায় রােড (K.N.C.Road) এবং কে.বি.বসু রােড। ক্ষেত্ৰনাথ গুস্তিয়ার স্বনামধন্য বক্তি। আর রাজা মানিকচাঁদ বসুর বংশপরম্পরা কে.বি.বসু। ১৯২৫ খ্রিঃ শ্যামবাজার থেকে বারাসাত পর্যন্ত বাসরুট চালু হয়।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
উত্তর চব্বিশ পরগণার জেলাসদর বারাসাতে এবং আশেপাশে দৈনিক হাট বাজারের সংখ্যা অনেক। অধিকাংশ বাজার হাটই ১৯৪৭ এর পর সৃষ্টি। কতকগুলি মাত্র আট দশ বছরের পুরাতন। কিন্তু বারাসাতের বড় বাজারের হাটবাজার, বিশেষ করে ‘হাটখোলার হাট’ [ Barasat Bibirhat ] অতীব প্রাচীন। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনেই বেশি করে দেখেন। প্রাচীনত্ব নিয়ে মাথা ঘামান না। অন্য কিছু মানুষ কিন্তু খ্যাপার মত খুঁজে ফেরেন প্রচীনত্বের ইতিহাস। আমি ইতিহাস লিখতে বসিনি। তা আমার সাধ্যায়ত্ব নয়। বারাসাতের প্রাচীনতম হাটের উপকথা তুলে ধরাই উদ্দেশ্য।
আমি বারাসাতের ‘বিবির হাটের’ [ Barasat Bibirhat ]কথা বলতে চাইছিলাম। নামটি আজকাল অবশ্যই বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। দু’শ পঁচিশ বছরের পুরাতন হাটটির খবর আর কি দরকারে লাগবে। সেটা ১৭৬৪ থেকে ১৭৬৮ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় বলে ধরা চলে। যখন একজন ‘লেডি’ এবং তখনকার বাংলা চলতি কথায় ‘বিবি’ বারাসাতের কেন্দ্রস্থলে ‘বিবির হাট’ বসিয়েছিলেন। না, নামকরণ তিনি করেননি। করেছিলেন সাধারণ মানুষেরাই।
জানতে অবশ্যই পাঠকেরা চাইবেন, কে ছিলেন সেই ‘বিবি’ কোথায় ছিল সেই হাট? সেই বিবি ছিলেন স্যার উইলিয়াম হোপবার্ট এর স্ত্রী লেডি হোপ। হাট যখন তিনি চালু করেন তখন তিনি বারাসাতের বাসিন্দা, হোপবার্ট এর স্ত্রী নন। তিনি তখন উইলিয়াম লাম্বার্ট এর স্ত্রী। কারণ হোপবার্ট পাটনায় নিহত হলে লেডি হোপ চলে আসেন পালিয়ে ও পরে লাম্বার্টকে বিয়ে করেন। বারাসাতের সুপ্রাচীন স্মৃতিস্থল, যার নামটি মাত্র আছে সেই মধু মুরলি বা মধু মুরারী পুকুর পাড়ে সুদৃশ্য ভবনে রইলেন। বিলেত চলে যাবার আগে স্থাপন করে যান বর্তমান হাটখোলা অঞ্চলে যে হাট, সেটাই তৎকালীন মানুষেরা বলতেন ‘বিবিরহাট’।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
Reference: Barasat Online
১৮৪৯ খ্রিঃ পূর্বে বারাসাতে মিশনারি বিদ্যালয় ছিল। স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। একটি মিশনারি বিদ্যালয় বারাসাতে অন্যটি ছিল বাদুড়িয়ায়। ছােটখাট আরও দু’তিনটিছিল। কলকাতার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন কালীকৃষ্ণ মিত্র (১৮২২)। কালীকৃষ্ণ মিত্র ও তাঁর ভাই ডঃ নবীনকৃষ্ণ মিত্র বারাসাতে চলে আসেন। স্ত্রী শিক্ষা নিয়ে মহাত্মা কালীকৃষ্ণের ভাবনার অংশীদার হন ঈশ্বরচন্দ্র, রামতনু লাহিড়ি এবং বেথুন সাহেব। কালীকৃষ্ণের সমসাময়িক বঙ্গ সমাজে তখন রামতনু (১৮১৩) দেবেন্দ্রনাথ (১৮১৭) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯) বিদ্যাসাগর (১৮২০) অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০) মধুসূদন (১৮২৪) ঋষি বঙ্কিম (১৮৩৮) বঙ্কিমচন্দ্র তখন কিশাের। সকলেই স্ত্রী শিক্ষার জন্য বারাসাতে স্ত্রী শিক্ষার জন্য কালীকৃষ্ণ মিত্রের স্বপক্ষে ছিলেন।
বারাসাতের বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে কালীকৃষ্ণ আরও সহায়তা পান। আচার্য হরিচরণ, প্রাণকৃষ্ণ মিত্র, ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস বিন্নি ট্রেওর, মৃত্যুঞ্জয় ও গৌরমােহন বিদ্যালংকার এবং আরও অনেক বিদোৎসাহীর। এই প্রসঙ্গে আটজনের নাম উল্লেখযােগ্য। এরা হলেন, কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র, কালীপ্রসন্ন ব্যানার্জী, কেদারনাথ মুখার্জী, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ।
এক বছর পর দত্তপুকুরের কালীকৃষ্ণ দত্ত নিবাধুইতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঐ বিদ্যালয়ে অর্থ সাহায্য দিতেন। দেবেন্দ্র এসেছেনও নিবাধুইতে। প্যারীচরণ সরকার ৫ই ডিসেম্বর, ১৮৪৫ খ্রিঃ বারাসাতে আসেন। দক্ষিণ পাড়ার প্রাণকৃষ্ণ মিত্রের উদ্যোগে ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্বের সভায় বারাসাতে ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৪৬ সালের ১লা জানুয়ারি বারাসাত জিলা স্কুল শুরু হয় পুরাতন জেলখানার ঘরে, ১২৫ জন ছাত্র নিয়ে। প্রধান শিক্ষক হন প্যারীচরণ সরকার। আর দুজন শিক্ষক হলেন প্যারীচরণের অনুজ প্রসন্ন সরকার এবং যজ্ঞেশ্বর ঘােষ। জেলখানার ঘর থেকে নতুন ভবন করা দরকার বােধে, প্যারীচরণ দান সংগ্রহে তৎপর হয়। মােট ১৬ জনে ৪ হাজার টাকা দেন।
প্রথম এই যােলজন হলেন :-
১) ঢাকার নবাব আব্দুল জং – ৫০০ টাকা,
২) দ্বারভাঙার মহারাজা – ২০০ টাকা,
৩) কাশীমবাজারের মহারাণি স্বর্ণময়ী – ১০০ টাকা,
৪) চুঁচুড়ার লালবিহারী দত্ত – ১০০ টাকা,
৫) যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর – ৫০ টাকা,
৬) জাগুলিয়ার কালীকৃষ্ণ বিশ্বাস – ২০ টাকা,
৭) কোন্নগরের শম্ভুচরণ চ্যাটার্জী – ১৬ টাকা,
৮) গুস্তিয়ার ক্ষেত্ৰনাথ চ্যাটার্জী – ২০ টাকা
এবং বিদ্যালয় ভবনের প্লান (১০-১৬) বারাসাতের শিক্ষানুরাগীবৃন্দ – ২৯৫ টাকা।
বিদ্যালয় শুরুর ছ’বছর পর প্যারীচরণ ছাত্রাবাস খুললেন ১৮৫২ খ্রিঃ। থাকা খাওয়ার জন্য আবাসিক ছাত্রদের জনপ্রতি ২টাকা করে দিতে হত। বারাসাতের তখনকার ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকশন ৩০০ টাকা সরকারি অনুদান দেন এবং প্যারীচরণ নিজে ৬০০ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। প্যারীচরণ বারাসাতে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ছাত্রদের নিজে হাতে সজিচাষ শেখাতেন। আচার্য প্যারীচরণকে বলা হত আরনলড অব দি ইস্ট। প্যারীচরণ বারাসাতে বসে First Book of Reading এবং Second Book of Reading লিখে প্রকাশ করেন। বর্তমানে প্যারীচরণের স্থাপিত বিদ্যালয়ের পুরাে নাম আচার্য প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক প্যারীচরণ নিজে। প্রথম হেডপন্ডিত বারাসাতের বৈদ্যনাথ চূড়ামণি। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রণম্য তারক ঘােষাল (স্বামী শিবানন্দ) এবং স্যার রাজেন্দ্রমাথ মুখার্জী। প্যারীচরণ ১৮৫৪ খ্রিঃ হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে যােগ দিতে চলে যান। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক হন। সেখানে চাকরিরত অবস্থায় ১৮৭৫ খ্রিঃ ৩০শে সেপ্টেম্বর অমরধামে প্রস্থান করেন। উল্লেখযােগ্য হল, কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলের প্রথম ছাত্রী নবীনকষ্ণের কন্যা কুন্তীবালা ওরফে স্বর্ণলতা মিত্র।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
বারাসাতের কেন্দ্রস্থল থেকে ৫/৬ কিলােমিটার দূরে কামারডাঙ্গায় (দমদম) লর্ড ক্লাইভের দ্বিতল বাড়ি এখনও আছে জীর্ণ অবস্থায়। বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩-৭৪ খ্রিঃ বর্তমান কাছারি ময়দানের পাশে তৈরি করেছিলেন হেস্টিংস ভিলা। এখনও কাঠামাে আছে, পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল এখন সারান হচ্ছে। ঋষি বঙ্কিম ডেঃ ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেঃ কালেক্টর হয়ে ঐ বাড়িতেই প্রথমে বাস করতেন। ১৮৩৪ খ্রিঃ এখানেই বাড়ি করেন কর্ণেল চ্যাপম্যান। সে বাড়ি এখন নেই। রিচার্ড বারওয়েল চ্যাপম্যানের বাড়িতে থাকতেন পরবর্তী কালে। লর্ড ভ্যানসিটার্ট গভর্নর হয়ে এসে বারাসাতে তিনতলা বাড়ি করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী মিঃ লাম্বার্ট লেডি হােপকে নিয়ে মধুমুরলী পুকুর পাড়ে ছােট বাড়িতে থাকতেন। স্যার ইলাইজা ইম্পে বারাসাতে আসতেন বন্ধুদের সাথে তাস খেলতে। ১৮৪৪ খ্রিঃ চার্লস ট্রেভর বারাসাতে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। কাপ্টেন ডি.টি.রিচার্ডসন বারাসতে ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। জন প্রিসেন্সপ এবং লুইস বলেড বারাসাতে নীলচাষ ও কারখানা করেন। গভর্নর ড্রেক বারাসাতের রেসিডেন্সিতে থাকতেন। করিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি থাকতেন চাঁপাডালিতে। রেনেলের জরিপপত্রে ১৭৬৪ খিঃ বারাসাতকে নদিয়া জেলার মধ্যে দেখান হয়। ডাফ সাহেবের সময় বারাসাতে ক্যাডেট কলেজ তৈরি হয়। লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০২ খ্রিঃ বারাসাতে মিলিটারি কলেজ উদ্বোধন করেন। ১৮১১ খ্রিঃ মিলিটারি কলেজটি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩১ খ্রিঃ ওয়ারেন হেস্টিংস ভিলা থেকে তিতুমির বিদ্রোহ দমন করা হয়।
অ্যাসলি ইডেন বারাসাতে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এসে ১৮৫৯ খ্রিঃ বাধ্যতামূলক নীলচাষ বন্ধের হুকুম দেন। সিন্দের আমিরকে ইংরেজরা বারাসাতে এনে বন্দী করে খে ১৮৫৭ খ্রিঃ। বর্তমান হাটখােলা বারাসাতের প্রাচীনতম হাট। জন্ম সময়ে নাম ছিল বিবিরহাট। লেডি হােপ পাটনায় স্বামী হােপবার্টের মৃত্যুর পর বারাসাতে এসে উইলিয়াম ল্যাম্বার্টের সাথে থাকতেন। লম্বার্ট বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এই লেডি হােপই ১৭৬৪-৬৮ খ্রিঃ মধ্যে বিবিরহাট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৬৮ খ্রিঃ হােপ বিলেত চলে যান। বিবিরহাটের পর সৃষ্টি হয় বাবুরহাট। স্রষ্টা রাজা রামমােহন রায়ের পরিবারের হরিমােহন রায়। বাবুরহাট ছিল মধ্যমগ্রামের গরুর হাটের দক্ষিণে।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
খােদ বারাসাতে নটি (৯টি) নীল কারখানা খােলা হয়েছিল। জোয়ান প্রিন্সেপ ১৭৭৯ খ্রিঃ যে কারখানা করেন, তার বর্তমান স্থানের নাম নীলগঞ্জ। দ্বিতীয় কারখানা হল বর্তমান নবপল্পীর কলপুকুরে। তৃতীয়টি মধুমুরলী পুকুরপাড়ে। ছােট কারখানা যা বর্তমান সুধা প্রিন্টের পিছনের পুকুর পাড়ে। তখন নীলগঞ্জের নাম ছিল তরফ চৌরাশি। সংলগ্ন ৮৪টি গ্রামে এবং অন্যত্র নীলচাষ বাধ্যতামূলক ছিল।
অত্যাচার করে অত্যাচারী নাম কিনলেন জীবনপুর, নর্সিমপুর, চাঁদপুর, কোলসুর, চৌরিপাতা, ঢাকলা, ঘােলদড়িয়া অঞ্চলের নীলকর বানু সাহেব এবং সাতক্ষীরা খুলনা অঞ্চলের রেনি সাহেব। ১৮৫৮ খ্রিঃ চৌবেড়ের দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটক প্রকাশের পর নীল বিদ্রোহ শুরু হয়। এইসব বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৯ খ্রিঃ বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসলি ইডেন বাধ্যতামূলক নীলচাষ বন্ধের হুকুম জারি করেন।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থান ছিল বর্তমান কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুল থেকে রেলস্টেশনের জলের ট্যাঙ্ক এবং ন’পাড়ার ক্রেতা সমবায় বিপনি থেকে এগারাে নম্বর রেলগেট পর্যন্ত। তখন অবশ্য রেলগেট, রেলপথ তৈরি হয়নি। এই উদ্ভিদ উদ্যানের স্রষ্টা ছিলেন আচার্য প্যারীচরণ সরকার এবং নবীনকৃষ্ণ মিত্র। উদ্যানে দুষ্প্রাপ্য গাছপালা ছিল। উদ্যানের দক্ষিণ কোণে ছিল নবীনকৃষ্ণের বাসস্থান। বিদ্যালয় সংলগ্ন উদ্ভিদ উদ্যানকে বলা হত নয়ন কানন। এখন সব নিশ্চিহ্ন। অবশ্য, ‘নয়ন কানন’ নামটি য়েছে।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
ইতিহাসের বারাসাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কালপঞ্জী। ইতিহাসের বারাসাত প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান। ভারতীয় প্রাচীন সভ্যতার সব নিদর্শন বারাসাত ঘিরে ঘুমিয়ে আছে। যুগ যুগ ধরে বারাসাতে নানা প্রাকৃতিক, ভৌলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ দেশী-বিদেশী বাক্তিগণ এখানে এসেছেন। ঘটেছে যুদ্ধ, আন্দোলন, নীলকরের অত্যাচার। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বারাসাত। এসবের গুরুত্ব কিছু কালচিহ্ন নথিভুক্ত করে দেওয়া হল।
১৫৪০-৪৫ খ্রিস্টাব্দ | শের শাহের পদস্থ কর্মচারী শেখ ইসমাইল বারাসাতে বাস করেন। |
১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ | মধুমুরলী পুকুর খোঁড়া হয়। |
১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ | নবাব সিরাজদৌল্লা সসৈন্যে বারাসাত অবস্থান করেন। |
১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ | হস্তিযূথের জলপানের জন্য হাতিপুকুর খোঁড়া হয়। |
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ | মীরাজাফর ক্লাইভকে যৌতুক দেন ২৪ পরগনা, বারাসাত সহ। |
১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ পরগনা নাম বিধিবদ্ধ হয়। |
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ | ভ্যানসিটার্ট সাহেব বারাসাতে ভিলা তৈরি করেন। |
১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ | মধুমুরলীতে অবস্থান কালে ল্যাম্বার্ট সাহেব বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন। |
১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দ | ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ২৪ পরগনার প্রশাসনিক দায়িত্ব পায়। |
১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতকে নদিয়া জেলার মধ্যে দেখান রেনেলের জরিপপত্র। |
১৭৬৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দ | সিসেস ল্যাম্বার্ট বারাসাতে ‘বিবিরহাট’ (হাটখােলা) বসান। |
১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ | জন প্রিন্সেপ বারাসাতে নীলচাষ শুরু করেন। |
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ | হেস্টিংস বারাসাতে ভিলা তৈরি করেন। |
১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দ | বারাসাতে বাড়ি তৈরি করেন কর্ণেল চ্যাম্পিয়ান। |
১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতে ঘােড়দৌড় মাঠ তৈরি হয় ও ১৭৮৮ খ্রিঃ থেকে ঘােড়দৌড় চালু হয়। |
১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ | ডাক্সাহেবের আমলে ক্যাডেট কলেজ তৈরি হয় বারাসাতে। |
১৮০২ খ্রিস্টাব্দ | ভ্যানসিটার্ট ভিলাতে লর্জ ওয়েলেসলি মিলিটারি কলেজ উদ্বোধন করেন। |
১৮১১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত থেকে সামরিক কলেজ ফোর্ট উইলিয়ামে চলে যায়। এখানে জেলখানা হয়। |
১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত জেলা ভেঙে সুবার্বন ডিস্ট্রিক্ট করা হয়। |
১৮২৩ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতকে সদর শহর ঘােষণা করা হয়। |
১৮২৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের ব্যারকপুরে সিপাহিরা অবাধ্যতা প্রকাশ করে। |
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতে ফরায়েজি আন্দোলন দানা বাধে। |
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত থেকে তিতুমির বিদ্রোহ দমন করা হয়। |
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ | কালীনাথ মুনশি রােড (টাকি রােড) তৈরি হয়। |
১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতকে জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেসি চালু হয়। |
১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ | প্রাণকৃষ্ণ মিত্রের বাসভবনে বারাসাতে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের সিদ্ধান্ত হয়। |
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দ | আচার্য প্যারীচরণ সরকার বারাসাতে আসেন। |
১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত জেলা স্কুল স্থাপিত হয়। |
১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দ | মহাত্মা কালীকৃষ্ণ, গালর্স স্কুল স্থাপন করেন রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ের নতুন। ভবন আরম্ভ হয়। |
১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ | কালীকৃষ্ণ দত্ত নিবাধুই বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। |
১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদঘাটন হয়। |
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ | হাটখােলায় বেসরকারি ভাবে বারাসাত হাসপাতাল খােলা হয়। |
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ | ছােট-জাগুলিয়ার প্রথম বাংলা মাসিকপত্র প্রকাশিত হয়। |
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ | ভ্যানসিটার্ট ভিলার কাছে সরকারি হাসপাতাল হয়। |
১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ | প্রথম বিধবাবিবাহ হয় গােবরডাঙায়। |
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ | রামতনু লাহিড়ি উত্তরপাড়া থেকে বারাসাত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় আসেন। |
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ | চৌবেড়ের দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটক প্রকাশিত হয়। |
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের ম্যাজিষ্ট্রেট অ্যাসলি ইডেন বাধ্যতামূলক নীলচাষ বন্ধের হুমকি জারি করেন। |
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের জেলা মর্যাদা চলে যায়। |
১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের বেঙ্গল টেম্পােরাল সােসাইটির মদ্যপান বিরােধী। সসাসাইটি তৈরি হয়। |
১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের কবিয়াল মহেশ কানার মৃত্যু হয়। |
১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত পৌরসভা স্থাপিত হয়। |
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত অ্যাসােসিয়েশন বিধিবদ্ধভাবে গঠিত হয়। |
১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ | ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বারাসাতে প্রথমবার ডেপুলি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হয়ে আসেন। |
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ |
খুলনা জেলা গঠিত হয়। সাতক্ষীরা বারাসাত থেকে খুলনায় চলে যায়। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র দ্বিতীয়বার প্রাগুক্ত পদে বারাসাত আসেন।
|
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ | বেঙ্গল সেন্ট্রাল রেলওয়ে বারাসাত রেলপথ তৈরি করে। |
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ | ব্যারাকপুর আলাদা মহকুমা হয়। দমদমের মহকুমা গৌরব চলে যায়। |
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাত রেল স্টেশন ঘর তৈরি হয়। |
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের পদ্মলােচন রাই ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রধান হন। এই বছর হৃদয়পুর স্টেশন তৈরি হয়। |
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ | রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কংগ্রেসের সভা করতে বারাসাতে আসেন। |
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ | ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বারাসাত আসেন। |
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ | বারাসাতে নাট্যচর্চা শুরু হয় এবং ইভনিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। |
১৯১১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতে গুরু ট্রেনিং বিদ্যালয় খােলা হয়েছিল। |
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ | বারাসাত লিটারারি অ্যাসােসিয়েশন হয়। |
১৯১৪-১৫ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতে প্রথম চ্যালেঞ্জ কাপ খেলা শুরু হয়। |
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ | মুগল আমলের সরাইখানা মােড়ের নাম হয় ডাকবাংলাে মােড়। |
১৯২১ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের ভাগীরথী চট্টোপাধ্যায় অসহযােগ আন্দোলনে যােগ দেন। |
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বারাসাতে শ্যামবাজার থেকে প্রথম বাস সার্ভিস চালু হয়। |
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ | নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বারাসাতে এসেছিলেন। |
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতের প্রথম সিনেমা হল ছায়াবাণী খােলা হয়েছিল। |
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ | মহাত্মা গান্ধী ও সুরাবর্দি সাহেব বারাসাত আসেন। |
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ | বঙ্গবিহার সংযুক্তি প্রস্তাবের বিরাধিতায় বারাসাতে সার্থক হরতাল হয়। |
১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ | খাদ্য-আন্দোলনে সার্থক হরতাল ঘটে বারাসাতে। |
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ | বারাসাতে শিক্ষক ধর্মঘট পালিত হয়। |
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ | নীলবিদ্রোহের শতবর্ষ পালিত হয় বারাসাতে।। |
১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ | ইন্দিরা গান্ধী হাসনাবাদ যাওয়ার পথে বারাসাত আসেন। |
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ | সি.পি.আই.-এর সর্বভারতীয় কৃষকসভা কোর্টের মাঠে।হয়। |
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মার্চ ২৪ পরগনা দু’ভাগ হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সদর হয় বারাসাত। |
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
# বানান ভুল চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ইংরেজরা বারাসাতে কী করে এল এবং ২৪ পরগনা উৎপত্তি ও বারাসাত
১৮৫৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর, মীরজাফর ৮৮২ বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত আজিমাবাদ, আকবর, আমীরপুর, ইখতিয়ারপুর, কলকাতা, খাসপুর, খড়িকুড়ি, মেলারমদল, মুনরাগাছা, মেদিনীমল্ল, মানপুর, মাগুরা, ময়দা, বালিয়া, বারিদাহাটি, হাতিয়াগড়, দক্ষিণ সাগর, পৈথান, পাঁকলি, শাহপুর, শাহনগর, মানপুর ও বাসুন্দীগড় নামে চব্বিশটি মহল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যৌতুক দেন। ১৭৫৯ খ্রিঃ এই মহলগুলি একত্রে ২৪ পরগনা নামে নথিভুক্ত হয়। আবার ১৮৩৪ খ্রিঃ ২৪-এর সাথে আরও ১৩টি পরগনা যুক্ত করে মােট দুটি জেলা করা হয়েছিল।
২১টি পরগনা নিয়ে বারাসাত জেলা এবং ১৬টি পরগনা নিয়ে আলিপুর জেলা। ১৮৬১ খ্রিঃ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ছিল। সাতক্ষীরাকে মহকুমা করে ২৪ পরগণায় ৮টি মহকুমা করা হয়। ১৮৮২ খ্রিঃ খুলনাকে জেলা করে সাতক্ষীরা খুলনাকে দেওয়া হয়। (১৯৮৬ খ্রিঃ ১লা মার্চ ২৪ পরগনা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বারাসাত উত্তর ২৪ পরগনার সদর হয় মাত্র ৪টি মহকুমা নিয়ে)।
খােলামেলা স্বাস্থকর পরিবেশ, শিকার করার সুবিধা, নীলচাষের পরিবেশ ইংরেজ রাজপুরুষদের বারাসাতে টেনে এনেছিল। বঙ্গিয় সাহিত্য সম্মেলনে ৭ম সভায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভাষণে (সম্পাদনা সুনীতি কুমার চ্যাটার্জী, পৃঃ – ২১৭-২১৮) বললেন শাস্ত্রীমশাই, মীরজাফর ক্লাইভকে ২৪টি পরগনা দেননি। দিয়েছিলেন মানসিংহ তার একজন কাছের মানুষকে যে প্রতাপাদিত্য রায়কে বন্দী করতে সাহায্য করে।
Download full map
Source: বই: ইতিহাসের বারাসাত | লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ | প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ | সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
ইতিহাসের বারাসাত বলতে বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগনার কেবলমাত্র বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসাত মহকুমা ধরা যাবে না। ২৪ পরগনা প্রথম বিভক্ত হয় ১৮১৪ খ্রিঃ। ভাগীরথীর পূর্বকুল থেকে সাগর পর্যন্ত ছিল বারাসাতের চৌহদ্দি। অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরাসহ, দমদম, ব্যারাকপুর, বসিরহাট, সাগর বেতড়, বরানগর, বারুইপুর, কোন্ননগর, কালীঘাট সবই বারাসাতের অধীন ছিল। বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ, Calcutta Past & present- Kathleen Blechynder-এর সব বিসয়ে আলােকপাত করেছেন। সে তথ্যে পানিহাটি, সুখচর, ভাটপাড়া, খাঁটুরা, সুন্দরবন, হালিশহর সবই বারাসাতের অতীত অঙ্গ। ১৮১৪ খ্রিঃ বারাসাত জেলা ছিল। তারপর সে মর্যাদা চলে গেছিল সুবার্বন ডিস্ট্রিক্ট তৈরি হলে। পুনরায় ১৮৩৪ খ্রিঃ বারাসাত জেলা হয়। এবং ১৮৬১ খ্রিঃ পর্যন্ত তা বহাল ছিল। বারাসাত ছিল একটি দ্বীপের মত। উত্তরে সুখাবতী এবং দক্ষিণে লাবণ্যবতী নদীদ্বয় বর্তমান বারাসাতকে বেষ্টন করেছিল। বারাসাতের অবস্থান ভৌগলিক দিক থেকে ২২’৮৩ উত্তর এবং ৮৮’২৯ পূর্ব মধ্যে। এ কারণে বারাসাতের আবহাওয়া মনােরম, বৃষ্টিপাত যথেষ্ট, স্বাভাবিক বনভূমি সমন্বিত স্বাস্থ্যকর স্থান হওয়ায় ইংরেজারা বারাসাতে বসবাস শুরু করেছিল। চন্দ্রবন তথা সুন্দরবন এসে মিশেছি বারাসাতে।
বারাসাত নামটি অর্বচীনকালের। বারাসাত শব্দটি আরবি ভাষার। অর্থ ‘পথ’ । আবার পারসি শব্দে ‘বারা’ অর্থ জনপদ। সাত জনপদের সমাহার বারাসাত। জনপদগুলি এখনও বর্তমান: প্রসাদপুর, বনমালিপুর, নিশ্চিন্দপুর, চন্দনপুর, হরিহরপর, শ্রীধরপুর এবং হৃদয়পুর। বারাসাতে ওয়ারেন হেস্টিংস পথের দুপাশে মেহগিলি গাছ পুঁতে (১৭৭২-১৮৮৪) পথের শােভা বর্ধন করেন।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন পথের ধারে সারিবদ্ধ গাছের শােভার জন্যই সাতটি গ্রামের নাম হয় বারাসাত। দাশরথি রায় (১৮০৬-১৯৫৭) পাঁচালি গান বেঁধে গেয়েছেন “পথের শােভা বারাসাত”। আবার জগৎ শেঠের বংশধরগণের মধ্যে বারাে ঘর শেঠ বারাসাতে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের একজন রামচন্দ্র শেঠ বর্তমান রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে শেঠপুকুরটি খুঁড়েছিলেন। কারও মতে বারাে ঘর শেঠ থেকেই বারাসাত। ইংরেজরা বারাসাতের দুপ্রকার নানান লিখতেন : BARASET এবং BARASUT তা যা হােক, বারাসাত নামটি মুঘল আমল এবং ইংরেজ আমলের মধ্যবর্তী কালের মধ্যেই মনে হয়।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দ্বিতীয় অধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দ মহারাজ বারাসতের যে স্থানে জন্মেছিলেন (জন্ম ১৬ডিসেম্বর ১৮৫৪), দেড়শতাধিক বছর আগে সে জায়গাটি ছিল রাণী রাসমণির কুঠিবাড়ি। শিবানন্দ মহারাজের পিতা রামকানাই ঘােষাল ছিলেন বারাসত কোর্টের মােক্তার, রাণী রাসমণির আইনী পরামর্শদাতা। তিনি এই কুঠিবাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি গৃহস্থ হলেও কুঠিবাড়িতে তন্ত্রমতে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে নিয়মিত উপাসনা করতেন।
বারাসতের এই কুঠিবাড়িতে স্বামী শিবানন্দ মহারাজ ভূমিষ্ঠ হন। তারকেশ্বরের কৃপায় জন্ম হয় বলে রামকানাই পুত্রের নাম রেখেছিলেন তারকনাথ। ১৯৩৪ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী শিবানন্দজী সাধনােচিত ধামে প্রস্থান করেন।
স্বামী শিবানন্দের শিষ্য ভবতারণ মহারাজ রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়াতেন এবং স্থায়ী চিহ্ন রাখবার জন্য ওই সব জায়গায় ফলক বসাতেন। তিনি হাওড়ায় থাকলেও প্রতিবছর মহাপুরুষ মহারাজের জন্মদিন উপলক্ষে বারাসতে এসে অনুষ্ঠান করতেন। মহাপুরুষ মহারাজের এই উৎসাহী শিষ্য, গুরুর জন্মভিটায়। একটি মঠ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এবং ভক্ত শিষ্যদের সহায়তায় কুঠিবাড়ির তৎকালীন মালিক স্বামী শিবানন্দের ভাইপাে অতুলকৃষ্ণ ঘােষালের কাছ থেকে যােলাে হাজার টাকা দিয়ে কুঠিবাড়ির জীর্ণ গৃহাদি ও জমিসহ তিরিশ কাঠা জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে আশ্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে আরও জমি ক্রয় করা হয়। ১৯৫৪ সালে শিবানন্দ ধামে প্রথম বাৎসরিক উৎসব শুরু হয় মহাপুরুষ মহারাজের হাওড়া ও কলকাতার ভক্ত কেদার মজুমদার, উপেন দাস, শিবদাস কুণ্ডু , অজিত মুনসি প্রমুখদের উদ্যোগে। সারদাদেবীর অন্যতম শিষ্য দেবেন মহারাজ (স্বামী যােগাত্মানন্দ) মহাপুরুষ মহারাজের পুণ্য জন্মভূমিতে মঠ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেন। মন্দিরের চূড়ার নক্সা তিনি নিজের হাতে করেন। শুভকাজ শুরু হয় ১৯৫৮ সালের ২১শে জুন। মন্দির নির্মাণের কাজে সহায়তা করেন প্রসিদ্ধ হােমিওপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুকারক মহেশ ভট্টাচার্যের সুযােগ্য পুত্র হেরম্ব ভট্টচার্য, অরুণ চৌধুরী, মনােরঞ্জন সরকার, হীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জাস্টিস বি.কে.গুহ, স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক আশু দে প্রমুখ সুধীজন। ১৯৫৮ সাল থেকে মঠে দুর্গাপূজা ও কালীপূজা শুরু হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ শাস্ত্রবিধিমতে সুসম্পন্ন হয় জগদগুরু শঙ্করাচার্যের আবির্ভাব তিথি ১৯৬১ সালের বৈশাখী শুক্লা পঞ্চমীতে। মঠের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী। স্বামী ভূতেশানন্দজী ওইদিন চণ্ডীপাঠ করেছিলেন। মঠে রামকৃষ্ণদেবের পট স্থাপন করেছিলেন মহাপুরুষ মহারাজের সেবক স্বামী কৈলাসানন্দজী। ১৯৬১ সালের পুণ্যতিথিতে মন্দির প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরে মন্দির পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়।
আশ্রম প্রতিষ্ঠার সময় দু’জন বেতনভােগী কর্মী ছিলেন; রান্নার জন্য গােপালঠাকুর এবং কায়িক পরিশ্রমের জন্য সােনালাল। আশ্রমবাসী ছিলেন দ’জন রাসমােহন ভট্টাচার্য ও পশুপতি মুখােপাধ্যায়। দৈনিক কাজকর্ম দেখাশােনার দায়িত্বে ছিলেন ধীরেন্দ্র চক্রবর্তী।
তখন স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী শিবানন্দ, শ্রীমা সারদাদেবীর কৃপাধন্য বহু ভক্ত ও সাধু এই আশ্রমে আসতেন, কাজকর্ম করতেন। এই আশ্রমে এসে দেখাশােনা করতেন রহড়ার স্বামী পূর্ণানন্দজী, গৌহাটির পশুপতি মহারাজ (স্বামী প্রণমাত্মানন্দজী) ছাড়াও কানু মহারাজ, সদাশিবানন্দজী, স্বামী অসীতানন্দজী এবং মহাপুরুষ মহারাজের সেবক স্বামী অপূর্বানন্দ। তিনি কয়েকটি মূল্যবান বই লিখেছিলেন এবং আশ্রমের আয়ের একটা উৎস ছিল এই বই বিক্রির টাকা।
এই শক্তিপীঠ ও শিবক্ষেত্রে রামকৃষ্ণদেবের মর্মরমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭৯ সালের ৮ই মে। মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন কলকাতার বিখ্যাত ভাস্কর জিপাল। প্রতিষ্ঠার দিন মন্দির প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন পূজ্যপাদ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ, স্বামী অভয়ানন্দ, স্বামী হিরন্ময়ানন্দ, স্বামী লােকেশ্বরানন্দ। পূজা-হােমযজ্ঞাদির দায়িত্বে ছিলেন স্বামী সুলভানন্দ ও স্বামী হিতানন্দ।
বারাসত মঠ খাতাকলমে বেলুড় মঠ কর্তৃক অধিগৃহীত হয় ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, তবে আনুষ্ঠনিকভাবে অধিগ্রহণ করা হয় ১৯৮৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি। ১৯৮৫ সালের ২৩শে এপ্রিল মঠে উৎসব হয়। ওই উৎসবে ভাষণ দেন স্বামী ভূতেশানন্দ ও স্বামী গহনানন্দ। ১৯৮৫ সাল থেকেই বারাসত মঠে দীক্ষাদান ব্যবস্তা চালু হয়। বেলুড় মঠের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী গম্ভীরানন্দ ভক্তদের দীক্ষা প্রদান সুচনা করেন।
বেলুড় মঠ কর্তৃক বারাসত আশ্রম অধিগ্রহণ করার পর ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বারাসত রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ পদ অলঙ্কৃত করেন প্রথম দুলাল মহারাজ (স্বামী পুরুষানন্দ), এই মঠে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন সুনীল মহারাজ (স্বামী পুরাণানন্দ) ও মহাদেব মহারাজ (স্বামী সগুণানন্দ)। তারপর নৃপেন মহারাজ (স্বামী মহেশানন্দ)। পরে সুকুমার মহারাজ ও ঋষীকেশ মহারাজ (স্বামী ধর্মদানন্দ ও স্বামী শ্রীনিবাসানন্দ)।
তথ্য স্বীকার : তথ্যগুলি মাধুকরী করেছি ডাঃ হর্ষবর্ধন ঘােষের বারাসাত রামকৃষ্ণ মঠ ও শিবানন্দ ধাম প্রবন্ধ থেকে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ মঠ, বারাসাত কর্তৃক প্রকাশিত স্বামী শিবানন্দজী মহারাজের আবির্ভাবের ১৫০ বছর পূর্তিতে।।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।
ইতিহাসের ছোঁয়া যে খালি প্রাচীন দুর্গ বা প্রাচীন পরিকাঠামোকেই ঘিরেই পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। আমাদের আসেপাশে কত যে ঐতিহাসিক স্থান বর্তমান তা কখনো কখনো আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাই না। সেইরকমই একটি অঞ্চল হল বারাসাত যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। বারাসাতের বিখ্যাত তিতুমীর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি বিনোদন পার্ক হল ‘সিরাজ উদ্যান’। যার নামের মধ্যে আজও ঐতিহ্য বহমান। এই পার্কটির কেন্দ্রস্থলে আছে একটি জলাশয় বা পুকুর। যা হাতিপুকুর নামে পরিচিত। এই ‘হাতিপুকুর’ নামটি আজও বহন করছে বহু যুগের ইতিহাস।
ভারতবর্ষে তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব চলছে রমরমিয়ে। শুরুর দিকে কলকাতা ছিল ইংরেজদের কাছে জলা-জঙ্গল ও খানা-খন্দে ভরা অস্বাস্থ্যকর একটি জায়গা। সেই সময় কলকাতার কাছে বারাসাত অঞ্চলে হেস্টিংস সাহেব তৈরি করেছিলেন হেস্টিংস ভিলা। তার পর থেকেই এই বারাসাত ও তার পার্শবর্তী অঞ্চল ইংরেজদের নজরে পড়ে এবং তাদের আনাগোনা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তাদের আমোদ প্রমোদের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে এই এলাকা।
সেই সময় মুর্শিদাবাদে বসে বাংলার মসনদ সামলাচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে মাঝে মধ্যেই কলকাতা আসতেন নবাব৷ সাথে থাকত সৈন্য সামন্ত ও হাতি ঘোড়া। এই বিশাল যাত্রাপথের মাঝে পড়ত বারাসাত। হেস্টিংস ভিলার কাছাকছি ছিল এক বিশাল বড় ময়দান। যা এখন কাছারি ময়দান নামে পরিচিত। এই কাছারি ময়দানেই নবাবের সৈন্য সামন্ত, হাতি ঘোড়া দুই দন্ড বিশ্রাম নিত। এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথের কারনে নবাব কাছারি ময়দান ও হেস্টিংস ভিলার কাছে এক পুকুর খনন করিয়েছিলেন তার হাতি-ঘোড়াদের জল খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে। কথিত আছে এই পুকুরেই নাকি জল খেত নবাবের হাতি ঘোড়া। সেই থেকেই এই পুকুরের নাম হয় ‘হাতিপুকুর’।
যদিও দীর্ঘদিনের অবহেলায় ও অযত্নে হাতিপুকুর ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছিল তার ঐতিহ্য। কয়েক বছর আগে এই অঞ্চলটিকে সংস্কার করা হয়। সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি বিনোদন পার্কের রূপ দেওয়া হয়। পার্কটির কেন্দ্রস্থলেই রয়েছে সেই পুকুরটি আর পুকুরটির মাঝে অবস্থান করছে একটি দ্বীপ। বহু পুরোনো আমলের একটি শিরিষ গাছ আজও অক্ষত দ্বীপে। যদিও গাছটি এখন ভগ্ন কিন্তু গাছের গুঁড়িটি সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে৷
বর্তমানে এই সিরাজ উদ্যান বারাসাতের একটি বিখ্যাত বিনোদন পার্ক। এটির ঐতিহাসিক রূপটিও সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। রয়েছে টয় ট্রেন ও বোটিংয়ের ব্যাবস্থাও। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হোক। বিলুপ্তপ্রায় ইতিহাসের ফের হোক পুনর্নির্মাণ। নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাক তাদের আঞ্চলিক ইতিহাস। এটুকুই তো কাম্য, তাই না!
Hatipukur of Barasat is now Siraj Udyan
একদা আমাদের গর্ব এবং সম্পূর্ণ ঘরোয়া রেল ছিল এই মার্টিন রেল (martin rail), এবং সেটা ছিল পুরোপুরি “মার্টিন এন্ড কো” এর মালিকানাধীনে। বেশ কয়েকটি রুটে চলতো এই মার্টিন রেল। কখনো কারো বাড়ীর পাশ দিয়ে, উঠোন এর পাশ দিয়ে কখনো বা পুকুরের পাশ দিয়ে। কালীঘাট ফলতা রেলওয়ে (কেএফআর) বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ম্যাকলেওড অ্যান্ড কোম্পানি নির্মিত চারটি রেললাইনের অন্যতম। উক্ত কোম্পানি লন্ডন-ভিত্তিক ম্যাকলেওড রাসেল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের এক সহায়ক সংস্থা ছিল।
কলকাতা নগরীর অভ্যন্তরস্থ ও পারিপার্শ্বিক অনুন্নত অঞ্চলগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার লক্ষ্যে এই লাইনগুলি স্থাপিত হয়। এই লাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলি ম্যাকলেওড লাইট রেলওয়েজ নামে একটি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হত।কেএফআর ছাড়াও আহমেদপুর-কাটোয়া, বর্ধমান-কাটোয়া ও বাঁকুড়া-দামোদর উপত্যকা লাইনেও এই কোম্পানি রেল পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
বিভিন্ন জনপ্রিয় রুট
১) হাওড়া ময়দান – আমতা (ন্যারোগেজ লাইন গ্যাপ ২ ফিট \ ৬১০ এম.এম । বন্ধ হয়ে যায় ১৯৭১ সালে।
Stations Bargachia-Chapadanga (Branch line under Howrah Amta)
- Bargachia
- Sitapur
- Prasadpur
- Jangipara
- Antpur
- Haoakhana
- Piasara
- Champadanga
২) বারাসাত – বসিরহাট ( ন্যারোগেজ লাইন গ্যাপ ২ ফিট ৬ ইঞ্চি /৭৬২ এম এম। বন্ধ হয়ে যায় ১৯৫৫ সালে। ১৯৬২ সালে ভারতীয় রেল লাইন রিপ্লেস করে ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি / ১৬৭৬ এম.এম এ.) এই মার্টিন রেলের লাইনটি ঘোলা কাজীপাড়ায় হাটখোলা বাজারের পাশ ঘেঁষে ছিল যতদূর শুনেছি।
সংযোজন: এক সময় বেলগাছিয়া থেকে হাসনাবাদ অব্দি ন্যারোগেজ রেলওয়ে লাইন ছিল, – মার্টিন রেল (ভায়া বাগুইহাটি, রাজারহাট)। এই লাইন স্থাপিত হয় ১৯০৫ সালে। এই লাইনের মধ্যবর্তী বেলিয়াঘাটা ব্রীজ থেকে অন্য আরেকটি লাইন বারাসাত পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ১৯৫৫ সালে বেলগাছিয়া থেকে বেলিয়াঘাটা ব্রীজ পর্যন্ত অংশ তুলে দেয়া হয়। কিন্তু বারাসাত থেকে বেলিয়াঘাটা ব্রীজ (বর্তমানে বেলিয়াঘাটা রোড) হয়ে হাসনাবাদ পর্যন্ত অংশ থেকে যায়। পরে এই অংশ অ্যালাইনমেন্টে কিছু পরিবর্তন ক’রে ব্রডগেজে রুপান্তরিত করা হয়। যা বর্তমানে বারাসাত হাসনাবাদ লাইন। Source :facebook.com
তথ্য সুত্র১: বাংলায় ভ্রমণ, প্রথম খন্ড, ৪৫ পাতা। প্রকাশকাল ১৯৪০ সাল। সম্পাদনা অমিয় বসু।
তথ্য সুত্র২: dipakrc.blogspot.com
- Belgachhia (0)
- Pattipooker (1)
- Baguiati (3)
- Hatiaria (4)
- Narainpur Colony (5)
- Rajarhat Bishnupur (8)
- Langalpota (9)
- Haroakhal (11)
- Kharibaria (13)
- Aminpur (15)
- Beliaghata Bridge (18) [Not to be confused with Present Beliaghata ]
- Deganga (21)
- Berchampa (23)
- Sarupnagar (26)
- Dhankuria G. Garden (27)
- Arbalia (28)
- Shikra Kulingram (30)
- Kholapota (32)
- Maitra Bagan (34)
- Basirhat (35)
- Basirhat Kutchery (36)
- Dandirhat (38)
- Sankchura (41)
- Taki Road (42)
- Hasnabad (44)
৩) হাওড়া – সিয়াখালা – Stations of Howrah – Shiakhala
- Howrah
- Kadamtala
- Kona/Eksara
- Baluhati
- Kalipur
- Chanditala
- Kalachara
- Krishnarampur
- janglepara
- Moshat
- Shiakhala
৪) কালীঘাট – ফলতা ( ন্যারোগেজ লাইন গ্যাপ ২ ফিট ৬ ইঞ্চি /৭৬২ এম এম। বন্ধ হয়ে যায় ১৯৫৭ সালে)
- Kalighat, now known as New Alipore railway station
- Gholesapur, Behala
- Sakher bazar
- Thakurpukur
- Pailan
- Bhasa
- Halt No.1
- Udairampur
- Amtala hat
- Halt No. 2, PratibhaNagar today well known as 2 No.
- Halt no 3 Rajarhat Today – Near Surya Cinema Hall & The State Bank of India – Rajarhat
- Shirakol Today – Under The PWD Authority
- Sibanipur also known as Fatepur.
- Dighirpar
- Harindanga
- Halt no 4, known as Belsingha
- Sahararhat
- Falta
৫) চণ্ডীতলা – জনাই
এছাড়া আরও কিছু রুটে মার্টিন রেল চলতো বলে শুনেছি।
Source: facebook.com
হতো নরবলি! বারাসাতের মন্দিরের গায়ে আজও লেগে অলৌকিকতার ছাপ। উত্তর চব্বিশ পরগণার একটি শহর বারাসাত। মন্দির টি বারাসাত পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ড এর বাদুতে অবস্থিত। কিন্তু এই শহরকেই কেন্দ্র করেই আছে বহু পুরনো স্থাপত্য। তেমনই এক পুরনো স্থাপত্য ডাকাত কালিবাড়ি যা তার জরাজীর্ণ দেহ আর রোমহর্ষক স্মৃতি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে। বারাসাত চাঁপাডালি থেকে কাজীপাড়া পেরিয়ে নদীভাগ হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে পড়ে এই ডাকাত কালিবাড়ি। কথিত আছে সময়ের ভারে জরাজীর্ণ, ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। রঘু ডাকাতের আরাধ্যা এই মন্দিরে বর্তমানে মুর্তির কোনো অস্তিত্ব নেই। মন্দির গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা বট গাছকেই পুজো করেন ভক্তরা।
এই জাগ্রত কালিবাড়িকে ঘিরে আছে বহু জনশ্রুতি ও মানুষের ব্যাক্তিগত অভিমত। একসময় ঘন জঞ্জলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। আর সেই সময় ডাকাতদের বিচরণক্ষেত্র ছিল এই অঞ্চল। রঘু ঘোষ ওরফে রঘু ডাকাত ও তার ভাই বিধূ ভূষণ ঘোষ ওরফে বিধূ ডাকাত দুজনই ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মন্দিরে মায়ের আরাধনা করত। আরাধনায় কোনো ত্রুটি ছিল না তাদের। লোকমুখে শোনা যায় এক সময় ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পরে যাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে মুর্তিটি তরোয়াল দিয়ে ভেঙে ফেলে রঘু ডাকাত। পরবর্তীতে এই ভগ্ন মুর্তিকেই পুজো করত সে। স্বাধীনতার পরও এখানে বাসুদেবের একটি মুর্তি ছিল। যদিও পরে এটি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখানে আর মুর্তি স্থাপনের সাহস দেখায়নি কেউ।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায় এই মন্দিরে নাকি ঘটেছে নানান অলৌকিক ঘটনা তাছাড়াও স্বচক্ষে মাতৃদর্শনের সুযোগ হয়েছে নাকি অনেকের। একসময় এখানে অষ্টধাতুর প্রতিমাকে কালিরূপে পুজো করত রঘুডাকাত। ডাকাতি করার আগে নরবলি দিয়ে পাশের পুকুরে ভাসিয়ে দিত সে। এইভাবেই সে নরবলির মাধ্যমে মাকে প্রসন্ন করত। আজও মন্দিরের পাশে রয়েছে সেই পুকুরটি। মন্দিরের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে গাছের শিকড়ে দেখা যায় একটি হাতের ছাপের মত অবয়ব। গাছের যে অংশকে কালী রূপে পুজো করা হয় সেটিও মানব দেহের নিম্নানাঙ্গের মতো দেখতে,নাভির চিহ্ন সুস্পষ্ট।
হালে পৌরসভার তরফে মন্দির গর্ভের সামনের উঠোনটি বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনে গড়ে উঠেছে একটি নতুন মন্দির। প্রতি অমাবস্যা ও মঙ্গলবারে হোমযজ্ঞের মাধ্যমে মাকে স্বরণ করেন ভক্তরা। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য। ভক্তদের কথায় মা নাকি তার সন্তানদের কখনো খালি হাতে ফেরান না। স্থানীয়রা আজও এই বহু প্রাচীন মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। মুর্তিহীন এই মন্দিরটির পুজো সমান তালে চলেছে৷ তাদের কথায় ভক্তিতেই আছে ভগবান। আর মাকে প্রসন্ন করতে মন প্রাণ দিয়ে আজও উদ্যত তাঁরা।
তথ্য সংগৃহীত।
দু’হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি ‘শ্রোতা জরিপ’-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।
বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় ১১ তম স্থানে আসেন মীর নিসার আলী তিতুমীর। আজ তাঁর জীবন-কথা।
বিপ্লবী, বিদ্রোহী মীর নাসির আলী বেশি পরিচিত শহীদ তিতুমীর হিসাবে। তিনি শুধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধেই লড়াই করেননি, তিনি বাংলার জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বাঁশের কেল্লা থেকে।
ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মীর নিসার আলী তিতুমীরের নাম উজ্জল হয়ে আছে।
তিনি সর্বপ্রথম ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
মীর নিসার আলী তিতুমীরের জন্ম ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার বারাসত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। বাবা সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মা আবিদা রোকেয়া খাতুন।
গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের পর তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। কোরান ও হাদিস বিষয়ে অল্প বয়সেই তিনি পাণ্ডিত্য লাভ করেন।
পবিত্র হজ্জ পালন করতে গিয়ে মক্কায় অবস্থানকালে তিতুমীর মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
১৮২৭ সালে দেশে ফিরে গিয়ে তিনি সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন।
নীলচাষীদের বিদ্রোহের পিছনে ছিল অর্ধ শতাব্দী ধরে নীল চাষীদের উপরে ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচার ও নিপীড়ন। ভারতীয় উপমহাদেশের মাটি নীল চাষের উপযোগী হওয়ায় ব্রিটিশ নীলকররা এতে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল। প্রথমদিকে নীলচাষ একচেটিয়া ছিল ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির।
এই অনুষ্ঠানমালা তৈরির সময় বাংলাদেশে ইতিহাসের অধ্যাপক আব্দুল মোমেন চৌধুরী জানান তিতুমীর জীবন শুরু করেছিলেন একজন সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে।
“তখন মুসলমান সমাজে যেসব বিদআত (এমন রীতি যা ইসলামসম্মত নয়) এবং শিরক্ (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা) ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলোকে দূর করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন।”
“কিন্তু এই ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট পরে একটা অর্থনৈতিক এবং ব্রিটিশ বিরোধী প্রেক্ষাপটে পরিণত হয়েছিল,” বলেন আব্দুল মোমেন চৌধুরী।
তিতুমীর হিন্দু ও মুসলমান কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে উৎসাহিত করেন। ২৪ পরগণা ও নদীয়ার অনেক কৃষক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান কৃষকদের নিয়ে তিতুমীরের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গণ আন্দোলনে রূপ নেয়।
“তিতুমীরের আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মকাণ্ড এবং জীবনাদর্শ সব কিছুকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে ঔপনিবেশিক পটভূমিতে,” বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
বাংলায় ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি।
“এই বাংলায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকেই ক্রমাগত সারা উপমহাদেশে তাদের রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত হয়। আবার এই বাংলা থেকেই ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিরোধ আন্দোলন,” বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন একাধিক এবং অসংখ্য প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে বাংলায় ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে।
“ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনগুলির পটভূমিতে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তিতুমীরের সংগ্রাম,” ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক হোসেন।
প্রজাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার তিতুমীর করতে চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বারাসাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদ্রোহ।
তিনি ২৪ পরগণার কিছু অংশ, নদীয়া ও ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ “বারাসাতের বিদ্রোহ” নামে পরিচিত।
এই বিদ্রোহে তিরাশি হাজার কৃষক সেনা তিতুমীরের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন।
“তাঁর আন্দোলনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল উপনিবেশ বিরোধিতায়। এবং এই উপনিবেশ বিরোধিতা করতে গিয়ে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে গিয়ে, তিনি কখনও ভাবেননি যে তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, ক্ষুদ্র একটি শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তাঁর বিপরীতে আছে বিরাট, বিশাল, শক্তিধর ইংরেজ রাজশক্তি,” বলেছেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
Battle of Miani (Meeanee), Sindh, India, 1843 (c1890). From “Cassell’s History of England – Special Edition, Vol. V.”[Cassell and Company, Limited, London, Paris, New York & Melbourne, circa 1890]
ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনগুলির পটভূমিতে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তিতুমীরের সংগ্রাম।
— সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (অধ্যাপক ও ইতিহাস গবেষক)
১৮৩১ সালে তিনি বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা এই কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন।
তাঁর আন্দোলনের একটি বড় প্রতীকী তাৎপর্য ছিল অন্যায়, এবং শাসকবর্গের অসঙ্গত শোষণের বিরুদ্ধে একটি ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানো এবং প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন তিতুমীরের আন্দোলনের দ্বিমাত্রিক একটা তাৎপর্য রয়েছে।
“তিনি শুধু উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন একথা বললে তাঁর অবদানকে কিছুটা সীমিত করা হয়, খণ্ডিত করা হয়। সমাজে অন্যায়, অবিচার, শোষণের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ, আন্দোলন ও সংগঠন- সেসব ব্যাপারে তাঁর যে অবদান ছিল, ঐটিই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বলে আমার মনে হয়,” বলেছেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
আঠারোশ একত্রিশ সালে কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের একটি বিশাল বাহিনী পাঠায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি তিতুমীরের সঙ্গে লড়াইয়ের লক্ষ্যে।
নারিকেলবাড়িয়ায় ১৮৩১এর উনিশে নভেম্বর ভীষণ যুদ্ধ বাঁধে।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ১৮৩১ সালে বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীরা একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেছিলেন।
ব্রিটিশ সৈন্যরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর তাঁর অনুসারীদের অভয় দিয়ে বলেন মৃত্যুকে ভয় পলে চলবে না। এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ দেশ উদ্ধার করবে। এই লড়াইয়ের পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।
ইংরেজদের কামানের গোলাবর্ষণে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশজন সঙ্গী যুদ্ধরত অবস্থায় সেই বাঁশের কেল্লাতেই প্রাণ হারান।
তিতুমীরের এই আন্দোলন, দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগ সব স্বাধীনতাকামীদের মনে প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
ঋণ : bbc.com/bengali
ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের শুরু থেকেই কলকাতার অবস্থা খুব একটা ভাল ছিলনা। তৎকালীন কলকাতা ইংরেজদের কাছে জলা জঙ্গলাকীর্ণ একটি অস্বাস্থ্যকর জায়গা বলেই গণ্য হত।তবে কলকাতা যাওয়ার পথে মধ্যবর্তী অঞ্চল ছিল এই বারাসাত। তাই এই জলা জঞ্জল পূর্ণ জায়গাটি ব্রিটিশদের নজরে আসে এবং অঞ্চলটির উন্নতির দিকে নজর দেওয়া হয়৷ সেই সময় থেকে ধিরে ধিরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তাদের আনন্দ-ফুর্তির জায়গা হয়ে ওঠে এই এলাকা। কলকাতার কাছে এই বারাসাতে হেস্টিংস ভিলা তৈরি করিয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। হেস্টিংস ভিলার উত্তর পশ্চিম অংশে অনেকটা এলাকা জুড়ে ছিল একটি ফাঁকা মাঠ।
সেই সময় সিরাজ উদ্দৌলা কলকাতা যাওয়ার পথে এই মাঠেই সৈন্য-সামন্ত নিয়ে দু দন্ড জিরিয়ে নিতেন। ইংরেজরা পরবর্তীকালে আনন্দ-ফুর্তির অঙ্গ হিসাবে এই মাঠটিকেই ঘোড়া দৌড়ের জন্য বেছে নেন। কলকাতায় ঘোড়া দৌড়ের প্রচলনের অনেক আগেই বারাসাতের বুকে দেশের সর্বপ্রথম ঘোড়দৌড়ের আয়োজন হয়েছিল ইংরেজদের হাত ধরেই। ইংরেজ আমলের সেই ঘোড়দৌড়ের মাঠের সামান্য অংশই এখন ‘কাছারি ময়দান’ নামে পরিচিত।
এই বাংলার মাটি ইতিহাসে সমৃদ্ধ। এর প্রতি কণাতে আছে ইতিহাস জড়িয়ে। তেমনই এই বাংলার বুকে উত্তর চব্বিশ পরগণার এক শহর বারাসাত। এই ছোট্ট শহরটি প্রাচীনকাল থেকেই বিখ্যাত। এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ আমল থেকে সবার নজরে আসে। হালে এই ঐতিহাসিক মাঠের কিছু অংশই বেঁচে আছে। অর্ধেকের বেশি অংশ নগর উন্নয়নের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়েছে। চারিদিকে বড় বড় রাস্তা, বাড়ি, ফ্ল্যাটে ঢেকে গিয়েছে। বর্তমানে মাঠটি খেলা ধুলা, প্রাতঃভ্রমণের কাজে ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে মেলাও বসে এই মাঠে। এই সকল আঞ্চলিক ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করা খুব প্রয়োজন। নয়তো নগর সভ্যতার ঔজ্বল্যে এই আঞ্চলিক ঐতিহ্যগুলো অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।