বারাসাতের ডাকাত কালীবাড়ি

হতো নরবলি! বারাসাতের মন্দিরের গায়ে আজও লেগে অলৌকিকতার ছাপ। উত্তর চব্বিশ পরগণার একটি শহর বারাসাত। মন্দির টি বারাসাত পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ড এর বাদুতে অবস্থিত। কিন্তু এই শহরকেই কেন্দ্র করেই আছে বহু পুরনো স্থাপত্য। তেমনই এক পুরনো স্থাপত্য ডাকাত কালিবাড়ি যা তার জরাজীর্ণ দেহ আর রোমহর্ষক স্মৃতি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে। বারাসাত চাঁপাডালি থেকে কাজীপাড়া পেরিয়ে নদীভাগ হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে পড়ে এই ডাকাত কালিবাড়ি। কথিত আছে সময়ের ভারে জরাজীর্ণ, ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। রঘু ডাকাতের আরাধ্যা এই মন্দিরে বর্তমানে মুর্তির কোনো অস্তিত্ব নেই। মন্দির গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা বট গাছকেই পুজো করেন ভক্তরা।

 

এই জাগ্রত কালিবাড়িকে ঘিরে আছে বহু জনশ্রুতি ও মানুষের ব্যাক্তিগত অভিমত। একসময় ঘন জঞ্জলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। আর সেই সময় ডাকাতদের বিচরণক্ষেত্র ছিল এই অঞ্চল। রঘু ঘোষ ওরফে রঘু ডাকাত ও তার ভাই বিধূ ভূষণ ঘোষ ওরফে বিধূ ডাকাত দুজনই ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মন্দিরে মায়ের আরাধনা করত। আরাধনায় কোনো ত্রুটি ছিল না তাদের। লোকমুখে শোনা যায় এক সময় ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পরে যাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে মুর্তিটি তরোয়াল দিয়ে ভেঙে ফেলে রঘু ডাকাত। পরবর্তীতে এই ভগ্ন মুর্তিকেই পুজো করত সে। স্বাধীনতার পরও এখানে বাসুদেবের একটি মুর্তি ছিল। যদিও পরে এটি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখানে আর মুর্তি স্থাপনের সাহস দেখায়নি কেউ।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায় এই মন্দিরে নাকি ঘটেছে নানান অলৌকিক ঘটনা তাছাড়াও স্বচক্ষে মাতৃদর্শনের সুযোগ হয়েছে নাকি অনেকের। একসময় এখানে অষ্টধাতুর প্রতিমাকে কালিরূপে পুজো করত রঘুডাকাত। ডাকাতি করার আগে নরবলি দিয়ে পাশের পুকুরে ভাসিয়ে দিত সে। এইভাবেই সে নরবলির মাধ্যমে মাকে প্রসন্ন করত। আজও মন্দিরের পাশে রয়েছে সেই পুকুরটি। মন্দিরের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে গাছের শিকড়ে দেখা যায় একটি হাতের ছাপের মত অবয়ব। গাছের যে অংশকে কালী রূপে পুজো করা হয় সেটিও মানব দেহের নিম্নানাঙ্গের মতো দেখতে,নাভির চিহ্ন সুস্পষ্ট।

হালে পৌরসভার তরফে মন্দির গর্ভের সামনের উঠোনটি বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনে গড়ে উঠেছে একটি নতুন মন্দির। প্রতি অমাবস্যা ও মঙ্গলবারে হোমযজ্ঞের মাধ্যমে মাকে স্বরণ করেন ভক্তরা। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য। ভক্তদের কথায় মা নাকি তার সন্তানদের কখনো খালি হাতে ফেরান না। স্থানীয়রা আজও এই বহু প্রাচীন মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। মুর্তিহীন এই মন্দিরটির পুজো সমান তালে চলেছে৷ তাদের কথায় ভক্তিতেই আছে ভগবান। আর মাকে প্রসন্ন করতে মন প্রাণ দিয়ে আজও উদ্যত তাঁরা।

তথ্য সংগৃহীত।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ১১ নম্বরে মীর নিসার আলী তিতুমীর
বারাসাত – বসিরহাট মার্টিন রেল | Martin Rail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

My Cart
Wishlist
Recently Viewed
Compare Products (0 Products)
Compare Product
Compare Product
Compare Product
Compare Product
Categories