Friday

May 9, 2025 Vol 2025

মাকড়সা পুকুরের ইতিকথা

লেখকঃ সৌরভ বারুই

বারাসাতের বাদু অঞ্চল সংলগ্ন অন্তর্গত মাকড়সা পুকুরটি বর্তমানে শীত কালের বন-ভোজনের মনোরম উপযুক্ত পরিবেশের জায়গা। প্রত্যেক বছর বহু মানুষের সমাগম মাকড়সা পুকুর অঞ্চলে আমোদ প্রমোদ করতে আসে। মাকড়সা পুকুর অঞ্চলের প্রাচীন লোকেদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, পুকুরটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরেও বেশি। পুকুরটি ৫২ বিঘা জমি নিয়ে অবস্থান করছে। সেকালে রহড়া-বারাসাতের প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় অতীতে “লাবন্যবতী”, “শুঁটি”, “বিদ্যাধরী” প্রভৃতি নদী গুলি যখন কালের প্রভাবে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে অবলুপ্তির মুখে পতিত হচ্ছে, তখন দেখা দেয় জল কষ্ট। এই জল কষ্ট দূর করার জন্য খোঁড়া হয় “মাকড়সা পুকুর” সহ আরও বেশ কিছু পুকুর। স্থানীয় প্রাচীন অধিবাসীদের কাছ থেকে একটা প্রচলিত শ্লোক শোনা যায়-“হালো, কালো, ডিমসা/ মধুমুরালি মাকড়সা/ ঠাকুর পুকুর বলে দেখে যা” –অর্থাৎ বোঝা যায় সেই সময় মাকড়সা পুকুর সহ “হালো”, “কালো”, ”ডিমসা”, “ঠাকুর পুকুর”, “মধুমুরালি” প্রভৃতি পুকুর খনন করা হয়।

মাকড়সা পুকুরের ইতিকথা
মাকড়সা পুকুরের ইতিকথা

ওই অঞ্চলের প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে “মাখন সাহা” নামের কোনো ব্যক্তি পুকুরটি-কে খনন করান। সে সময়ে স্থানীয় লোকেরা পুকুরটি-কে “মাখন সাহার” পুকুর নামেই ডাকত। পরবর্তী কালে এই “মাখন সাহা” নামটি অপভ্রংশ হয়ে “মাকড়সা” নামের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। বর্তমানে মাকড়সা পুকুরের তত্ত্ববধায়ক (Caretaker) হলেন আসুরা বিবি। তিনি বলেন, তার চাচা জহরুদ্দিন এবং তার স্বামী নেপাল মন্ডল খুব ছোটো বেলায় শৈলেন মিত্রের সাথে বিহার থেকে এখানে চলে আসেন। শৈলেন মিত্র মাখন সাহার কাছ থেকে পুকুরটি কিনে নেন এবং তার পর থেকেই তাঁরা এখানেই থাকতেন। তার পর পরবর্তী কালে শৈলেন মিত্র কলকাতার বেলেঘাটায় চলে যান। মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন। জমির দেখাশুনার জন্য ছিল জহরুদ্দিন ও নেপাল মন্ডল। তিনি তাদের খুব ভালোবাসাতেন। সেই সব বহুকাল আগের কথা। প্রায় ২৫ বছর আগে ১০১ বছর বয়সে মারা যান শৈলেন মিত্র। তার পর-পরি মারা গেছেন নেপাল মন্ডল। সম্প্রতি মাস ছয়েক আগে জহরুদ্দিন দেহ রেখেছেন। শৈলেন মিত্রের কন্যা পদ্মা খাস্তুগির এখন মহেশ পুরের নিবাসী।

মাকড়সা পুকুর খনন করার সময় পুকুরের মাটি উঁচু হয়ে দু ‘পাশের ঢিবিকে অনেক উঁচু করে রেখে ছিল। পরবর্তীকালে স্থানীয় ইট-ভাটা গোবিন্দ ভাটার জন্য মাটি এখান থেকেই সংগ্রহ করা হত। ফলে সেই সু-উচ্চ ঢিবির সিকি ভাগই আজ টিকে আছে।

Barasat Online

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *