১৮৪৯ খ্রিঃ পূর্বে বারাসাতে মিশনারি বিদ্যালয় ছিল। স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। একটি মিশনারি বিদ্যালয় বারাসাতে অন্যটি ছিল বাদুড়িয়ায়। ছােটখাট আরও দু’তিনটিছিল। কলকাতার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন কালীকৃষ্ণ মিত্র (১৮২২)। কালীকৃষ্ণ মিত্র ও তাঁর ভাই ডঃ নবীনকৃষ্ণ মিত্র বারাসাতে চলে আসেন। স্ত্রী শিক্ষা নিয়ে মহাত্মা কালীকৃষ্ণের ভাবনার অংশীদার হন ঈশ্বরচন্দ্র, রামতনু লাহিড়ি এবং বেথুন সাহেব। কালীকৃষ্ণের সমসাময়িক বঙ্গ সমাজে তখন রামতনু (১৮১৩) দেবেন্দ্রনাথ (১৮১৭) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯) বিদ্যাসাগর (১৮২০) অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০) মধুসূদন (১৮২৪) ঋষি বঙ্কিম (১৮৩৮) বঙ্কিমচন্দ্র তখন কিশাের। সকলেই স্ত্রী শিক্ষার জন্য বারাসাতে স্ত্রী শিক্ষার জন্য কালীকৃষ্ণ মিত্রের স্বপক্ষে ছিলেন।
বারাসাতের বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে কালীকৃষ্ণ আরও সহায়তা পান। আচার্য হরিচরণ, প্রাণকৃষ্ণ মিত্র, ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস বিন্নি ট্রেওর, মৃত্যুঞ্জয় ও গৌরমােহন বিদ্যালংকার এবং আরও অনেক বিদোৎসাহীর। এই প্রসঙ্গে আটজনের নাম উল্লেখযােগ্য। এরা হলেন, কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র, কালীপ্রসন্ন ব্যানার্জী, কেদারনাথ মুখার্জী, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ।
এক বছর পর দত্তপুকুরের কালীকৃষ্ণ দত্ত নিবাধুইতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঐ বিদ্যালয়ে অর্থ সাহায্য দিতেন। দেবেন্দ্র এসেছেনও নিবাধুইতে। প্যারীচরণ সরকার ৫ই ডিসেম্বর, ১৮৪৫ খ্রিঃ বারাসাতে আসেন। দক্ষিণ পাড়ার প্রাণকৃষ্ণ মিত্রের উদ্যোগে ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্বের সভায় বারাসাতে ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৪৬ সালের ১লা জানুয়ারি বারাসাত জিলা স্কুল শুরু হয় পুরাতন জেলখানার ঘরে, ১২৫ জন ছাত্র নিয়ে। প্রধান শিক্ষক হন প্যারীচরণ সরকার। আর দুজন শিক্ষক হলেন প্যারীচরণের অনুজ প্রসন্ন সরকার এবং যজ্ঞেশ্বর ঘােষ। জেলখানার ঘর থেকে নতুন ভবন করা দরকার বােধে, প্যারীচরণ দান সংগ্রহে তৎপর হয়। মােট ১৬ জনে ৪ হাজার টাকা দেন।
প্রথম এই যােলজন হলেন :-
১) ঢাকার নবাব আব্দুল জং – ৫০০ টাকা,
২) দ্বারভাঙার মহারাজা – ২০০ টাকা,
৩) কাশীমবাজারের মহারাণি স্বর্ণময়ী – ১০০ টাকা,
৪) চুঁচুড়ার লালবিহারী দত্ত – ১০০ টাকা,
৫) যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর – ৫০ টাকা,
৬) জাগুলিয়ার কালীকৃষ্ণ বিশ্বাস – ২০ টাকা,
৭) কোন্নগরের শম্ভুচরণ চ্যাটার্জী – ১৬ টাকা,
৮) গুস্তিয়ার ক্ষেত্ৰনাথ চ্যাটার্জী – ২০ টাকা
এবং বিদ্যালয় ভবনের প্লান (১০-১৬) বারাসাতের শিক্ষানুরাগীবৃন্দ – ২৯৫ টাকা।
বিদ্যালয় শুরুর ছ’বছর পর প্যারীচরণ ছাত্রাবাস খুললেন ১৮৫২ খ্রিঃ। থাকা খাওয়ার জন্য আবাসিক ছাত্রদের জনপ্রতি ২টাকা করে দিতে হত। বারাসাতের তখনকার ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকশন ৩০০ টাকা সরকারি অনুদান দেন এবং প্যারীচরণ নিজে ৬০০ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। প্যারীচরণ বারাসাতে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ছাত্রদের নিজে হাতে সজিচাষ শেখাতেন। আচার্য প্যারীচরণকে বলা হত আরনলড অব দি ইস্ট। প্যারীচরণ বারাসাতে বসে First Book of Reading এবং Second Book of Reading লিখে প্রকাশ করেন। বর্তমানে প্যারীচরণের স্থাপিত বিদ্যালয়ের পুরাে নাম আচার্য প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক প্যারীচরণ নিজে। প্রথম হেডপন্ডিত বারাসাতের বৈদ্যনাথ চূড়ামণি। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রণম্য তারক ঘােষাল (স্বামী শিবানন্দ) এবং স্যার রাজেন্দ্রমাথ মুখার্জী। প্যারীচরণ ১৮৫৪ খ্রিঃ হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে যােগ দিতে চলে যান। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক হন। সেখানে চাকরিরত অবস্থায় ১৮৭৫ খ্রিঃ ৩০শে সেপ্টেম্বর অমরধামে প্রস্থান করেন। উল্লেখযােগ্য হল, কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলের প্রথম ছাত্রী নবীনকষ্ণের কন্যা কুন্তীবালা ওরফে স্বর্ণলতা মিত্র।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।