বারাসাতের নানা কথা
ইতিহাসের বারাসাত বলতে বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগনার কেবলমাত্র বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসাত মহকুমা ধরা যাবে না। ২৪ পরগনা প্রথম বিভক্ত হয় ১৮১৪ খ্রিঃ। ভাগীরথীর পূর্বকুল থেকে সাগর পর্যন্ত ছিল বারাসাতের চৌহদ্দি। অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরাসহ, দমদম, ব্যারাকপুর, বসিরহাট, সাগর বেতড়, বরানগর, বারুইপুর, কোন্ননগর, কালীঘাট সবই বারাসাতের অধীন ছিল। বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ, Calcutta Past & present- Kathleen Blechynder-এর সব বিসয়ে আলােকপাত করেছেন। সে তথ্যে পানিহাটি, সুখচর, ভাটপাড়া, খাঁটুরা, সুন্দরবন, হালিশহর সবই বারাসাতের অতীত অঙ্গ। ১৮১৪ খ্রিঃ বারাসাত জেলা ছিল। তারপর সে মর্যাদা চলে গেছিল সুবার্বন ডিস্ট্রিক্ট তৈরি হলে। পুনরায় ১৮৩৪ খ্রিঃ বারাসাত জেলা হয়। এবং ১৮৬১ খ্রিঃ পর্যন্ত তা বহাল ছিল। বারাসাত ছিল একটি দ্বীপের মত। উত্তরে সুখাবতী এবং দক্ষিণে লাবণ্যবতী নদীদ্বয় বর্তমান বারাসাতকে বেষ্টন করেছিল। বারাসাতের অবস্থান ভৌগলিক দিক থেকে ২২’৮৩ উত্তর এবং ৮৮’২৯ পূর্ব মধ্যে। এ কারণে বারাসাতের আবহাওয়া মনােরম, বৃষ্টিপাত যথেষ্ট, স্বাভাবিক বনভূমি সমন্বিত স্বাস্থ্যকর স্থান হওয়ায় ইংরেজারা বারাসাতে বসবাস শুরু করেছিল। চন্দ্রবন তথা সুন্দরবন এসে মিশেছি বারাসাতে।
![](https://barasatonline.com/wp-content/uploads/2021/05/barasat-hastings-house.jpg)
বারাসাত নামটি অর্বচীনকালের। বারাসাত শব্দটি আরবি ভাষার। অর্থ ‘পথ’ । আবার পারসি শব্দে ‘বারা’ অর্থ জনপদ। সাত জনপদের সমাহার বারাসাত। জনপদগুলি এখনও বর্তমান: প্রসাদপুর, বনমালিপুর, নিশ্চিন্দপুর, চন্দনপুর, হরিহরপর, শ্রীধরপুর এবং হৃদয়পুর। বারাসাতে ওয়ারেন হেস্টিংস পথের দুপাশে মেহগিলি গাছ পুঁতে (১৭৭২-১৮৮৪) পথের শােভা বর্ধন করেন।
![](https://blog.barasatonline.in/wp-content/uploads/2021/05/Warren-Hastings.jpg)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন পথের ধারে সারিবদ্ধ গাছের শােভার জন্যই সাতটি গ্রামের নাম হয় বারাসাত। দাশরথি রায় (১৮০৬-১৯৫৭) পাঁচালি গান বেঁধে গেয়েছেন “পথের শােভা বারাসাত”। আবার জগৎ শেঠের বংশধরগণের মধ্যে বারাে ঘর শেঠ বারাসাতে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের একজন রামচন্দ্র শেঠ বর্তমান রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে শেঠপুকুরটি খুঁড়েছিলেন। কারও মতে বারাে ঘর শেঠ থেকেই বারাসাত। ইংরেজরা বারাসাতের দুপ্রকার নানান লিখতেন : BARASET এবং BARASUT তা যা হােক, বারাসাত নামটি মুঘল আমল এবং ইংরেজ আমলের মধ্যবর্তী কালের মধ্যেই মনে হয়।
Source:
বই: ইতিহাসের বারাসাত
লেখক: শম্ভুনাথ ঘোষ
প্রকাশক: বারাসাত সংস্কৃতি পরিষদ
সভাপতি: বিশ্বনাথ ঘোষ
# ধন্যবাদ অয়ন মজুমদার (অয়ন দা) কে, এই বইটি দেওয়ার জন্য।